তখন ভার্সিটির দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশুনার নাম করে প্রায়ই এক বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা দিতে যাওয়া হতো। পড়াশোনা যে কখনোই হতো না তা না; তবে আড্ডা, মুভি দেখা এগুলোর হারই ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।
বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায় যেমনটা হয়, হেন বিষয় নেই যা নিয়ে আলোচনা হয় না। এসব হেন-তেন-যেন বিষয়ের মধ্যে স্রষ্টা আর ডেভিলও অন্যতম উপাদেয় বিষয়। প্রায়ই আমাদের মজলিসে যেসব আসর বসত, তার মধ্যে অন্যতম ছিল স্রষ্টা আর ডেভিল নিয়ে আলোচনা। আমাদের এক বড় ভাই ছিলেন যিনি যেকোনো বিষয়ে আড্ডা জমাতে ছিলেন ওস্তাদ। তার কাছে এ ধরনের বিষয় ছিল অত্যন্ত সুরুচিকর। ভিন্ন ভার্সিটিতে পড়া আরেক সমবয়সী বন্ধু ছিল; তারও এসব বিষয়ে—বিশেষ করে স্যাটানিক বিষয়ে—আগ্রহ ছিল প্রচুর।
বিখ্যাত সেই আড্ডা-কাম-রাত্রিযাপনগুলোর সুবাদে স্রষ্টার অস্তিত্ব-অনস্তিত্বসহ এ ধরনের আরও মনোহর বিষয়গুলো তখনই প্রথম ভাবনার পর্দায় আঘাত হানে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু ইতিমধ্যেই ইসলামের ন্যূনতম আবশ্যিক কাজ নামাজটাই অনিয়মিত—প্রায় নাই—হয়ে পড়েছিল, তাই স্রষ্টা নিয়ে সংশয় প্রথম যখন শুনি তখন ভালোই লাগছিল। এমনিতেই নামাজ পড়ি না, তার উপর এখন যদি স্রষ্টাই না-থাকে তাহলে তো বাঁচা গেল—পাপবোধটাও আর থাকবে না।
যেভাবে সংশয়ের শুরু
বড় ভাই মারফত জানতে পারি, স্রষ্টা সর্বত্র বিরাজমান। তাহলে স্রষ্টা কি ঐ নর্দমার মাঝেও বিরাজমান? নাহ! সেটা কী করে হয়। অথচ আমরা সবাই জানি স্রষ্টার উপস্থিতি সর্বত্র। অতএব স্রষ্টা বলে কিছু নেই। যুক্তিটা আরজ আলী মাতুব্বরের। (সঠিক কথা হচ্ছে, স্রষ্টা মোটেও সর্বত্র বিরাজমান নন। কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সবকিছু জানেন, শোনেন—সে এক ভিন্ন আলোচনা।) সম্ভবত বাঙালি পাড়ায় প্রায় অধিকাংশেরই নাস্তিকতার হাতেখড়ি আরজ আলীর মাধ্যমে। যেদিন প্রথম এই ‘মনীষী’র নাম শুনেছিলাম তার পর দিনই অন্তর্জাল ফুঁড়ে বার করলাম আরজ আলী সমগ্র। খুব যে পড়েছি তা না, তবে যতটুকু পড়েছি—আর ব্লগে নাস্তিক-সংশয়বাদীদের নিজেদের কূটস্বার্থে ইসলামবিরোধী লেখালেখি পড়ে ইসলাম সম্পর্কে শেষ যে-সলতেখানি জ্বলছিল সেটাও নিভে গেল।
আমি তখন নাস্তিক না হলেও সংশয়বাদী। ব্লগে যেসব হ়াদীস় আর কুর’আনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামের নিকুচি করা হতো মাঝে মাঝে আমি সেগুলোর উত্তর খুঁজতাম। লেখাবাহুল্য তখন ফেসবুকে কি অন্তর্জালে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো মানুষদের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। যাদের কাছে সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করতাম তারাও কমবেশি ছিল আমারই মতো। হয় জানে না, নয় ছোটবেলায় যা জেনেছে অন্ধভাবে সেটাই আঁকড়ে পড়ে আছে। জিজ্ঞাসু মনের তৃষ্ণা মেটানোর মতো কেউ তখন ছিল না।
যাই হোক, সৈয়ক হক, আজাদদের মতো লোকেরাও এসবের কোনো কুলকিনারা পাননি। এত কিছু জানা সত্তেও তাঁরা যদি এই ক্ষেত্রে আজীবন নবিশ থাকেন, সেক্ষেত্রে আমি যে হদিশ পাচ্ছিলাম না, তাতে দোষের কী!
যেভাবে সংশয়ের নিপাত
আধুনিক প্রযুক্তি যে কেবল মানুষের ক্ষতি করে, ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়—কথাটা সর্বক্ষেত্রে মোটেও প্রযোজ্য না। ব্যবহারের উপর নির্ভর করে প্রযুক্তির বৈধতা-অবৈধতা। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির কারণে একদিকে যেমন পেয়েছি ইসলামের বিরুদ্ধে সন্দেহ উদ্রেককারী অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত, তেমনি পেয়েছি ইসলামের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়ার অসংখ্য প্রমাণ।
সঠিক ইসলামের প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাই ড. জাকির নায়েকের বিভিন্ন লেকচার থেকে। চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে “পিস টিভি” আসত। প্রথম প্রথম মাঝে মাঝে দুএক মিনিট ড. জাকির নায়েকের বিভিন্ন লেকচার শুনতাম। ভাঙাচোরা চেহারা, যেমন হালকা গড়ন তেমন হালকা দাড়ি। সেই লোকটাই কী জোড়ের সাথেই না তাঁর প্রতি নিক্ষিপ্ত এক একটা প্রশ্নের সূঁচালো অগ্রভাগকে ভোঁতা করে বেঁকিয়ে ফেরত পাঠাতেন। শুধু ড. জাকিরই নন, “পিস টিভি”-র ইংলিশ চ্যানেলটির অধিকাংশ বক্তা ও অনুষ্ঠানই আধুনিক ও তরুণ সংশয়বাদীদের উদ্দেশ্য করে তৈরি করা। ফলে “পিস টিভি”-র প্রোগ্রামগুলো খুব সহজেই আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখাবাহুল্য এর মধ্য সর্বাগ্রে ছিল ড. জাকিরের তিরন্দাজি সব লেকচার। তখনো যে ইসলামের বলয়ে পুরোপুরি এসেছি এমন না, তবে ধীরে ধীরে মনের গহীনে পরিবর্তনের, আগাছাগুলো পরিষ্কারের একটা সংকেত পাচ্ছিলাম।
ড. জাকির নায়েকের যে-লেকচার এবং লেকচার পরবর্তী প্রশ্নোত্তর শুনে প্রথম ইসলামের প্রতি অন্তর থেকে টান অনুভব করি সেটা হচ্ছে: The Qur’an and Modern Science : Compatible or incompatible। এই লেকচার শোনার পর প্রথম যে উপলব্ধি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়: জগতে চলতে ফিরতে, বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশে আমাদের মনে ইসলাম নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের যে-বুদবুদ ওঠে, সেগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতো লোক আশেপাশে খুবই স্বল্প।
ছোটবেলা থেকেই ইসলাম সম্পর্কে অনেক ধোঁয়াশা আবছা জ্ঞান নিয়ে আমরা বড় হই। বড় হতে হতে বহির্জগত, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, দর্শন আর নানান কিসিমের মানুষের সংস্পর্শে এসে সেই ধোঁয়াশাগুলো কালো মেঘের রূপ নেয়। আর এভাবে একসময় আড়ালে যাওয়া সূর্যটাকেই একেবারে ভুল যাই আমরা। আমাদের অবচেতন তখন বলে ওঠে: সূর্য আবার কী!?
একটু খেয়াল করে দেখি, নাস্তিকতা ও সংশয়বাদীতা নিয়ে আমাদের মূল প্রশ্ন বা সন্দেহগুলো কী কী?
১. স্রষ্টা আছেন কি না?
২. স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন?
৩. স্রষ্টা দুনিয়া বানিয়ে একে ছেড়ে দিয়েছেন, এই জগতের উপর স্রষ্টার আর কোনো কর্তৃত্ব নেই।
৪. পরকাল বলে কিছু নেই, এগুলো মানুষের অলীক চিন্তা।
ঘুরেফিরে প্রশ্ন এগুলোই। কেউ স্রেফ করার জন্য প্রশ্নগুলো করেন, কেউ আন্তরিকভাবে জানার জন্যই করেন। কেউ বা আবার এসবের তোয়াক্কাই করেন না। মন চায় জিন্দেগি যাপন করেন। (যদি আল্লাহ চান, উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর অকাট্য উত্তর নিয়ে অন্য কোনোদিন আলোচনা করব)
ড. জাকিরের ঐ লেকচার এবং অন্যান্য আরও লেকচারের মাধ্যমে সন্দেহের উপরিতলের শ্যাওলাগুলো পরিষ্কার হতে থাকে। তবে সংশয় পরিপূর্ণভাবে নিপাত হলো তখন, যখন সন্ধান পেলাম ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি বা IOU-এর। ড. আবু আমীনাহ বিলাল ফিলিপ্সের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ইউনিভার্সিটিতে তাওহ়ীদ (আল্লাহর একত্ব)-এর উপর বুনিয়াদি কোর্সগুলো করার পর থেকে মনের সূক্ষ্মতম সন্দেহগুলোও হাওয়ায় মিলিয়ে যেত লাগল। এরপর যখন মোরাল ফাউন্ডেশন অফ ইসলামিক কালচার কোর্সটা করলাম তখন তো পুরাই থ। নিজেকে কী মূর্খই না লাগছিল তখন। ইসলাম সম্পর্কে ভাসাভাসা এই জ্ঞান নিয়ে আমি ইসলাম নিয়ে সন্দিহান ছিলাম! আর যখন দা‘ওয়াহ ট্রেনিং কোর্সটা করলাম তখন নিজেকে কি বোকা আর দুর্ভাগাই না মনে হচ্ছিল: কেন আগে করিনি!
হাহ! এইসব মামুলি প্রশ্নের উত্তর জানতাম না বলে একদিন স্রষ্টায় অবিশ্বাস করতাম। আমারই মতো অন্যদের কাছ থেকে সন্দেহের উপকরণ বগলে নিয়ে সালাহ, সিয়াম থেকে দূরে ছিলাম! এই সব ঠুনকো সন্দেহের জন্য?? অথচ ইসলামিক বিশেষজ্ঞগণ কি নিপুণভাবেই না এগুলোর সমাধান বাৎলে দিয়ে গেছেন। আমরা জানি না, খুঁজি না, জানতে চাই না; সঠিক পথে পৌঁছাতে চাই না। পৌঁছালে যে নিয়মিত সালাহ আদায় করতে হবে, কন্টকাকীর্ণ পথে সামলে পা ফেলতে হবে। হাতে গোনা কিছু হারাম থেকে দূরে থাকতে হবে। তারচেয়ে আমার মন যেভাবে চায় সেভাবে চলাটাই যে শ্রেয় কারও কারও কাছে। তাতে ইহজীবনে হয়তো কাঁটাগুলোকে দলাইমোচড়াই করে পার পাওয়া যাবে, কিন্তু পরজীবনে পাই পাই হিসেব দিতে হবে—কোনো সন্দেহ নেই।
সমস্যার মূলে
প্রথাগতভাবে মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটা ছেলেমেয়েই আজ নাস্তিকতা-সংশয়বাদী বিষের স্বীকার। আমার ক্ষেত্রে এর মূল কারণ ছিল শৈশব-কৈশোর থেকে স্রষ্টাকে না চেনা, স্রষ্টার এই বিশাল সৃষ্টি না বোঝা।
আর দশটা ছেলেদের কিংবা মেয়েদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়, আমিও সেভাবে কুর’আন শুধু আবৃত্তি করতে শিখেছিলাম, কিন্তু মর্মার্থ কখনো বোঝা হয়ে ওঠেনি। নামাজ পড়ার তাগাদাই শুধু পেয়ে গেছি মা-বাবা’র কাছ থেকে; কিন্তু কেন পড়ছি, কী কারণে, কী উদ্দেশ্যে পড়ছি সেগুলো কখনো অনুধাবন করা হয়ে ওঠেনি। রোজা কেবল আটকে ছিল উপবাস থাকার মধ্যে। স্রষ্টা কী প্রজ্ঞাগুণে সিয়ামের প্রত্যাদেশ দিয়েছেন সেটা ভেবে দেখার সময় হয়নি কখনো। এগুলোর সঙ্গে রয়েছে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির উর্বর সব সেক্যুলার বইপত্র আর প্রচারমাধ্যম।
বইপত্রে, প্রবন্ধে, অনলাইন ব্লগে যারা ইসলামবিদ্বেষ চর্চা করেন তাদের কেউই আরবিতে দক্ষ নন। স্রেফ অনুবাদকে পুঁজি করে তারা তাদের কথিত ‘শিল্প’ চর্চা করেন। বাংলা, ইংরেজি, জর্মন এমনকি ফ্রেঞ্চ ভাষাতেও তাদের গভীর দখল থাকলেও শুধু আরবি ভাষা এলেই তাদের জ্ঞানের দৌড় হাঁটুতে নেমে আসে। বাংলা না জেনে শুধু অনুবাদ পড়ে কেউ যদি রবীন্দ্রনাথের বিশাল সাহিত্যের সমালোচনা করতে শুরু করেন তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে বলুন তো? অনুবাদ শুধু একভাষার কিছু শব্দকে অন্যভাষায় রূপান্তর করে দিতে পারে; কিন্তু মূল ভাষায় মূল শব্দটি যে ভাব, যে ঝঙ্কার ও অর্থের সূক্ষ্মতা নিয়ে হাজির হয় সেটা এরা কী করে উপলব্ধি করবে? অথচ ইসলামের বিরুদ্ধে, কথিত মানবধর্ম বা মানবতাবাদের আড়ালে নাস্তিকতা ও সংশয়বাদের প্রচারে এরা সবসময় খাড়া। অধিকাংশ বাংলা গল্প, উপন্যাস, নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে, প্রবন্ধ কিংবা কলামে যেভাবে বিকৃতভাবে ইসলামকে তুলে ধরা হয়; আড়কলমে কিশোর মগজে বস্তুবাদ আর ভোগবাদের বীজ বপে দেওয়া হয়, সেখানে এখনো যে এদেশে মানুষ হিদায়াহ পায়, ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা পায়—এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও—ইসলাম যে-স্রষ্টা প্রত্যাদিষ্ট জীবনব্যবস্থা সেটা প্রমাণে এই বাস্তব উপাত্তই যথেষ্ট।
আর নাস্তিকরাও যে কারও উপাসনা করে না সেটাও সত্য নয় বলে বোধ করি। কারণ স্রষ্টায় বিশ্বাস ও স্রষ্টার উপাসনা মানুষের ফিত়রাহ বা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আর একারণেই কট্টর নাস্তিকদেরও উপাস্য রয়েছে। সেই উপাস্য হতে পারে মনোরঞ্জন, অর্থ, খ্যাতি কিংবা নিজেকেই উপাসনা। বুদ্ধ কখনোই নিজেকে ঈশ্বর দাবি না করলেও বুদ্ধের শিষ্যরা যেভাবে বুদ্ধকেই পূজাসম মনে করে পূজো করছে, ঠিক তেমনি নাস্তিক-সংশয়বাদীদের জন্যও রয়েছে হরেক রকমের, কিংবা পাঁচমিশেলি ঈশ্বর।
তুমি কি তাকে দেখেছ যে তার উপাস্য বানিয়েছে নিজের কামনা-বাসনাকে?[সূরাহ আল-ফুরক়ান (মানদণ্ড), ২৫:৪৩]
নীড়ে ফেরা আমি
আমার জন্য নীড়ে ফেরা ছিল নতুনভাবে ইসলামকে চেনা; সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতায় ইসলামকে অবলোকন করা। সত্যিকার ইসলাম এত সুন্দর? এত বাস্তবসম্মত? এত জীবনঘনিষ্ঠ? নীড়ে ফেরার পর এগুলোই ছিল আমার প্রথম অনুধাবন। আর এই ইসলাম ছেড়েই আজ আমার ভাইবোনেরা কত দূরে। ইসলাম তাদের কাছে হয় নামসর্বস্ব এক আচার-প্রথা, নয়তো সেক্যুলার ভাবনার ধুলোয় মলিন হওয়া এক ছিন্ন পত্র।
শেষ করার আগে সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনার পরবর্তী পদক্ষেপটা নেওয়ার আগে অন্তত একবার আন্তরিকভাবে প্রকৃত ইসলামের সুলুক সন্ধান করুন। দশম শ্রেণিতে ধর্মে এ-প্লাস পাওয়া ছাত্রের কিংবা ছাত্রীর দৃষ্টিতে নয়; পূর্বসূরি বিদ্বানগণ (সালাফ আস-সালিহীন) যেভাবে মূলগতভাবে ইসলামকে বুঝেছেন, যেই দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন, সেই দৃষ্টিতে একবার নজর ফেরান। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সত্যানুসন্ধানের আন্তরিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ যদি এগোন তাহলে স্রষ্টা তাকে সিরাত় আল-মুস্তাকীম তথা সরল-সঠিক পথটি দেখাবেনই। কারণ স্রষ্টা নিজেই বলেছেন,
“যারা আমার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে (আল্লাহর ধর্ম—ইসলাম) পরিচালিত করব। আল্লাহ তো মুহ়সিনূনদের (সৎকর্মশীল) সঙ্গেই আছেন।”
[সূরাহ আল-আনকাবূত (মাকড়সা), ২৯:৬৯]
পরিশিষ্ট-১
1. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “প্রত্যেক শিশুই ফিত়রাহ (স্রষ্টার প্রতি স্বভাবজাত বিশ্বাস)–এর উপর জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা জরুথুস্ট্রি বানায়।” [স়াহ়ীহ় মুসলিম, গ্রন্থ ৩৩-ক়াদ্র, হ়াদীস় নং-৬৪২৩]
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “মানুষ একে অপরকে প্রশ্ন করতে করতে একসময় এই প্রশ্ন করবে যে, আল্লাহ তো সবকিছুই বানিয়েছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?” এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সে যেন বলে, “আমি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছি।” [স়াহ়ীহ় মুসলিম, গ্রন্থ ১-কিতাব আল-ঈমান, হ়াদীস় নং-০২৪২]
পরিশিষ্ট-২
মুহসিন খান ও ত়াক়ি-উদ্দীন হ়িলালী, Interpretation of the Meanings of The Noble Qur’ân, Dar-us-salam Publication ।
উম্ম্ মুহাম্মাদ, The Noble Qur’ân, Saheeh International