মূল: ইসমাইল কামদার, হেড টিউটোরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি
নোট: নিচের ফাতওয়াগুলোতে যেসব মতামত দেওয়া হয়েছে তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত। কুর’আন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করেই আমি আমার এই মতামতগুলো দিয়েছি; কোনো নির্দিষ্ট মাযহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি যদি কোনো মাযহাব অনুসরণ করেন, তাহলে ফিকহি ব্যাপারগুলোতে স্থানীয় মুফতির সঙ্গে পরামর্শ করুন।
প্রশ্ন: চাঁদ দেখা বিষয়ে স্থানীয় লোকজন যদি ভিন্নমত পোষণ করে সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
উত্তর: চাঁদ দেখা সংক্রান্ত হাদীসগুলো ‘আলিমভেদে ভিন্নভাবে বোঝার কারণে এই ব্যাপারে ভিন্ন মতের উৎপত্তি। আমাদের উচিত এসব মতপার্থক্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, এবং এগুলোকে অনৈক্যের কারণ না বানানো।
আদর্শ হচ্ছে প্রতিটা অঞ্চলে একটা হিলাল (চাঁদ দেখা) কমিটি থাকবে, এবং সাধারণ মানুষ তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবে। কেউ যদি একমত না হন তবুও। কাজেই আপনার অঞ্চলে যদি কোনো চাঁদ দেখা কমিটি থাকে তাহলে তাদের মত অনুসরণ করুন। না থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত অনুসরণ করুন। আল্লাহ ভালো জানেন।
প্রশ্ন: তারাউইহ (তারাবিহ) সলাত ছেড়ে দেওয়া কি কোনো পাপ?
উত্তর: না। ইসলামে কেবল পাঁচ ওয়াক্ত সলাত পড়া বাধ্যতামূলক বা ফরজ। তারাউইহ ঐচ্ছিক। কারণ হাদীসে এসেছে নাবি (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেন, “আমি আশঙ্কা করছিলাম রাতের সলাত তোমাদের উপর বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে।” (সহীহ বুখারি, ৩:৩২:২২৯) নাবি (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) যে তারাউইহ সলাতকে বাধ্যতামূলক মনে করতেন না, এবং তিনি যে চানওনি এটা বাধ্যতামূলক হোক—এই হাদীস তার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করছে। কাজেই এটা এমন একটা মুস্তাহাব কাজ যে ব্যাপারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এবং এটা আদায়ে অধিক পুরষ্কার রয়েছে।
প্রশ্ন: তারাউইহতে আমাদের কত রাকাহ পড়া উচিত?
উত্তর: এ ব্যাপারে ‘আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে এবং ব্যাপারটি নিয়ে অনেক মতামত আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, নাবি (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) তারাউইহর জন্য ন্যূনতম কিংবা সর্বোচ্চ কোনো রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তাঁর সুন্নাহ ছিল ৮ রাকাত পড়া। আর সাহাবিদের প্র্যাকটিস ছিল ২০ রাকাত পড়া। কাজেই ৮ রাকাত পড়াটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। তবে কেউ চাইলে ২০ রাকাতও পড়তে পারেন। আর এর বেশি যদি কেউ পড়তে চান তাহলে সেটাও অনুমোদিত।
প্রশ্ন: রমাদান মাসে তারাউইহতে পুরো কুর’আন খতম করা কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর: এটা বাধ্যতামূলক তো নয়ই, মুস্তাহাবও নয়। কুর’আন খতম করতে হবে এই মর্মে আমার জানা কোনো হাদীস নেই।
তবে কেউ চাইলে খতম করতেই পারেন। কিন্তু সেটা করতে যেয়ে জাম‘আতে কেউ যদি অতিদ্রুত তিলাওয়াত করেন এবং তাজউঈদের নিয়ম ভাঙেন, সেক্ষেত্রে এটা অনুমোদিত নয়। অতিদ্রুত পড়ার চাইতে খুশূ ও বুঝের সাথে অল্প পরিমাণ পড়া ও সেসব আয়াতের অর্থ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা এবং জীবন বদলানোর জন্য সেগুলো নিজের জীবনে প্রয়োগ করা বেশি ভালো।
প্রশ্ন: সিয়াম পালন করা অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজা কি অনুমোদিত?
উত্তর: হ্যাঁ, অনুমোদিত। কারণ, টুথপেস্ট কোনো খাওয়ার বা পান করার জিনিস না। তবে সতর্ক থাকতে হবে আপনি যেন এটা গিলে না ফেলেন। টুথপেস্ট ব্যবহার এ কারণেই অনুমোদিত যে, নাবি (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) সিয়াম পালনরত অবস্থায় সিওয়াক ব্যবহার করে দাঁত মাজার অনুমতি দিয়েছেন।
প্রশ্ন: সিগারেট খেয়ে ইফতার করার ব্যাপারে বিধান কী?
উত্তর: আর দশটা হারাম জিনিস খেয়ে ইফতার করা আর সিগারেট খেয়ে ইফতার করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটা সিয়ামের সব বারাকাহকে ছিনিয়ে নেয়। হারাম দিয়ে ইফতার করা নিঃসন্দেহে অপরাধ। বরং ধূমপানের মতো বদভ্যাস ছাড়ার জন্য রমাদান মাস এক আদর্শ সময়।
প্রশ্ন: সর্বোচ্চ কত সময় পর্যন্ত আমি সেহরি খেতে পারব?
উত্তর: ফাজ্রের সময় শুরুর আগ পর্যন্ত সুহূর খাওয়া যায়। ফাজ্রের সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে সিয়াম শুরু হয়ে যাবে। কোনো কোনো দেশে ফাজ্রের সময় শুরুর সাথে সাথেই আযান দেওয়া হয়। যেসব দেশে দেরি করে আযান দেওয়া হয়, সেসব দেশের মানুষগণ ফাজ্রের সময় দেখার জন্য সময়নির্দেশক কোনো ক্যালেন্ডারের দারস্থ হতে পারেন।
প্রশ্ন: সিয়াম পালনের জন্য কি মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত করা বাধ্যতামূলক?
উত্তর: নিয়্যাতের জায়গা অন্তরে। সুহূরের জন্য জাগাটাই কি এই অর্থ প্রকাশ করে না যে আমি রোজার রাখার নিয়্যাতেই ঘুম থেকে উঠেছি? মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত করতে হবে এই মর্মে আমার কোনো হাদীস জানা নেই। কাজেই সুন্নাহ হচ্ছে অন্তরে নিয়্যাত করা। আল্লাহই ভালো জানেন।
মূল লেখার লিংক: http://abumuawiyah.com/ramadan-fiqh-faqs/
জাযাকাল্লাহু খাইর, মাসউদ শরীফ ভাই।
ওয়া ইয়্যাকা।
জাযাকা আল্লাহ খাইরান ভাই। এক পোস্টেই অনেক কিছু জানতে পারলাম।