শখ থেকে শক

lightbulb-3104355_1280

সদ্য এক বছর পেরোনো আমার মেয়ের নতুন শখ হয়েছে বৈদ্যুতিক সুইচ নিয়ে খেলা। ওকে কোলে করে নিয়ে কোনো সুইচের সামনে গেলেই হলো—অমনি ছটফট করে উঠবে সুইচ দাবানোর জন্য। যদিও ওর হাতের আঙুলে এখনো অতটা জোর হয়নি যে পুরোপুরি সুইচ দাবাতে পারবে, তবুও ওটুকুতেই অনেক মজা পায়।

আমাকেও ধৈর্য ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ বৈদ্যুতিক সুইচের পাশের খোপে থাকে বৈদ্যুতিক সকেট। অসাবধানবশত সেগুলোর কোনো একটা যদি অন থাকা অবস্থায় আঙুল ঢুকিয়ে দেয় তাহলেই সেরেছে। সে নিজে তো শক খাবেই, আমিও খাব। তাই চেষ্টা করছি অন্য কোনো খেলায় যেন ওর মন সরিয়ে নেওয়া যায়।

আমি নিশ্চিত যেকোনো যত্নবান মা-বাবাই চাইবেন না তার সন্তান বৈদ্যুতিক শক খাক। কারণ এখানে আশঙ্কা অত্যন্ত গুরুতর। বেখেয়ালে মৃত্যুও হয়ে যেতে পারে। আমরা মা-বাবারা নিজেরা জীবনের কোনো সময়ে বৈদ্যুতিক শক খাই বা না-খাই, আমরা জানি যে, সকেটে হাত দিলে ঘোরতর বিপদ।

 
একটু খেয়াল করি: সকেটে হাত দিলে শক না-খেলেও আমরা অনেকে অন্যের মারফত তা জানি। হয় অন্যকে শক খেতে দেখেছি, বা অন্যের শক খাওয়ার খবর শুনেছি। নিজেকে শক খেয়ে এই বিপদের প্রমাণ পেতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়। সাপের কামড়ে বিষ ছড়ায় কিনা সেটা পরখ করার জন্য কেউ নিশ্চয় বিষধর সাপের ছোবল খেতে চাবেন না।
 
আপদের  ব্যাপারগুলো এমনই। নিজেদের অভিজ্ঞতা না থাকলেও অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিই। নিজে বাঁচি। অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এই একই পদ্ধতি জাহান্নামের বেলাতেও
খাটে।
 
জান্নাত-জাহান্নাম বা খোদ আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে যারা সন্দিহান, বা
নিদেনপক্ষে সংশয়ী তাদের একটা ওজর হচ্ছে এগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ করা যাবে না। এই ওজর নতুন নয়। মাক্কায় যখন নাবি (তাঁর উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর শান্তি ও অনুগ্রহ) ইসলামের চিরায়ত বাণী প্রচার করছিলেন তখন অবিশ্বাসীরা, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরাও অনুরূপ ওজর তুলত।
তারা বলত, আমাদের উপর শাস্তি এনে দেখাও। মহান আল্লাহ তাদের
খণ্ডন করেছেন এই বলে যে, স্বয়ং ফেরেশতাও যদি আসে, তবু তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করবে না। যতক্ষণ না তারা পশ্চিমদিক থেকে সূর্য
উদয় হতে দেখবে, কিংবা মৃত্যুদূতকে নিজচোখে দেখবে ততক্ষণ তারা
বিশ্বাস করবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তারা “নিজে শক খেয়ে দেখি”—এই নীতিতে বিশ্বাসী।
 
এটা আল্লাহর তরফ থেকে মানবজাতির প্রতি এক বিশাল
অনুগ্রহ যে, তিনি বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাঁর বার্তাবাহকদের মাধ্যমে মানুষদের সতর্ক করে দিয়েছেন অন্তিম সময়ের ব্যাপারে। জান্নাতের আনন্দ ও জাহান্নামের ভয়াবহতার ব্যাপারে। ঠিক আমরা যারা বাবা-মা তাদের মতো।
 
সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন কোনো বাবা-মা চাবেন না যে, তার সন্তান শক খেয়ে শিখুক, সকেটে আঙুল দিলে কী পরিণতি হবে। আমরা এক্ষেত্রে সতর্ককারীর ভূমিকা পালন করছি। রাসূল বা আল্লাহর বার্তাবাহকদের অনেকগুলো কাজের মধ্যে এটাও একটা কাজ: আমাদের সতর্ক করে দেওয়া। তাঁদের কাছে আল্লাহ সরাসরি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন কীভাবে পৃথিবীতে নিয়ম মেনে বাস
করতে হবে। কোন কোন বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে। কীসে কল্যাণ; কীসে অকল্যাণ, বিপদ, শঙ্কা।
 
এখন আমরা যদি সতর্ক না-হই, সকেটে আঙুল ঢুকিয়ে ইইইইই করতে
থাকি তাহলে সর্বনাশ আমাদেরই। দুষ্টু বা অতিকৌতূহলী কোনো বাচ্চা হয়তো বারণ মানবে না। নিজের আঙুল সকেটে ঢুকিয়েই ছাড়বে। তার ফলও পাবে। মানুষের মধ্যেও যারা বেশি পাপাচারী, তাদেরকেও আল্লাহ মাঝেমধ্যে বিভিন্নভাবে সংকেত দেন। কেউ শুধরে সঠিক পথে ফিরে আসে। কেউ ডুবে যায় গভীর থেকে আরও গভীরে।
 
বৈদ্যুতিক পাওয়ার হাউজের সামনে বড় করে হলুদ রঙের বোর্ডে সতর্কবাণী দেওয়াই থাকে: ড্যানজার “৪৪০” ভোল্ট। তারপরও কেউ যদি স্বেচ্ছায় সেখানে ঢুকে আত্মাহুতি দেয় তাহলে কার কী বলার আছে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *