সফলতার সংজ্ঞা

success

সফলতার সংজ্ঞা কী? কাড়ি কাড়ি অর্থ সম্পদ কামানোর নামই কি সফলতা? নাকি নিজের পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটানোতে, অল্পে তুষ্ট থাকতে পারাতেই সফলতা?

একেকজনের দৃষ্টিকোণ থেকে সফলতার সংজ্ঞা হতে পারে একেক রকম। কেউ হয়তো অ্যাপলের নতুন আইফোন পকেটে রাখাকে সফলতা মনে করবেন। আবার নিম্ন মধ্যবিত্ত কারও কাছে ওয়ালটন মোবাইলই হতে পারে সফলতা। যে ছেলে/মেয়ে পড়াশোনায় সবসময় ভালো তার কাছে রোল নম্বর দুই কিংবা তিনের নিচে যাওয়া মানেই ব্যর্থতা। আর যে ছেলে/মেয়ে শিক্ষার্থী হিসেবে অত ভালো নয়, তার জন্য হয়তো পাস করাটাই সফলতা।

নতুন গ্রাজুয়েশন করা কারও কাছে পনের/বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকুরি বাগানোর মধ্যেই সফলতা। অন্যদিকে চাকুরির বাজারে যে ইতোমধ্যেই দুতিন বছর পার করেছে সে হয়তো পঁচিশ/ত্রিশ হাজার বেতনের চাকুরি না-পেলে নিজেকে সফল মনে করবে না; কিংবা বেতনের হারটা হতে পারে আরও বেশি।

তো যা-ই হোক, একেকজনের ক্ষেত্রে সংজ্ঞা একেক রকম হলেও, একটা দিক দিয়ে সবাই এক: প্রতিটি সফলতাই পার্থিব জীবনকে কেন্দ্র করে। প্রতিটা সফলতার পেছনেই আছে দুনিয়াবি চিন্তা। একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গি একেকরকম হওয়া সত্ত্বে মূলগতভাবে সবার চিন্তাধারা একই। আর তা হচ্ছে নিজের চোখে, সমাজের মানুষের চোখে, পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। 

চাওয়াটা যতক্ষণ বৈধ ততক্ষণ এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু একজন মুসলিমের জীবনে—যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছেকে সঁপে দিয়েছেন মহান আল্লাহর কাছে—তার কাছে সফলতা কেবল দুনিয়াবি চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সীমাবদ্ধ নয় নিজের কিংবা সমাজের দৃষ্টিকোণের সীমিত গণ্ডির মধ্যে। এমন ব্যক্তির কাছে সফলতার সংজ্ঞা অনেক বেশি প্রশস্ত। অনেক বেশি বাস্তব। অনেক বেশি সত্য। এই সফলতাই চূড়ান্ত সফলতা; কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর চোখে সফল সে-ই প্রকৃত অর্থে সফল। তার এই সফলতা চিরন্তন। শাশ্বত।

যেলোকটা সারাদিন রিকশা চালিয়ে দিন শেষে নিজের পরিবারের জন্য কিছু খোরাক নিতে পেরেছেন, সেও যেমন এই দৃষ্টিকোণ থেকে সফল, তেমনি যে লোকটা বড় কোনো কোম্পানিতে চাকুরি করে মাস শেষে লাখ টাকার বেতনের চেক বুঝে নিয়েছেন সেও এই দৃষ্টিকোণ থেকে সফল। এই সফলতা সর্বজনীন। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। নেই তুলনা-প্রতিতুলনা।

তো কারা এই সফলতা অর্জন করেছেন? মহিমান্বিত গ্রন্থ আল-কুর’আনে মহান আল্লাহ বিভিন্নভাবে এই সফল ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরেছেন। সফল তারাই:

  • যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর পাঠানো গ্রন্থগুলো এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী । (২:৫)
  • যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করে, ভালো কাজের নির্দেশ দেয় ও খারাপ কাজে বারণ করে। (৩:১০৪)
  • যাদের ডান পাশের ওজনের পাল্লা বিচারের দিনে ভারী হবে। (৭:৮)
  • যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্বাস করে, তাঁকে অনুসরণ করার মাধ্যমে তাঁকে প্রকৃত অর্থেই সম্মান করে, আল-কুর’আনকে অনুসরণ করে। (৭:১৫৭)
  • যারা কঠিন সংগ্রাম করে এবং নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। (৯:৮৮)
  • আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যেকোনো আদেশ নিষেধ শোনামাত্রই যারা বলে, “আমরা শুনলাম ও মানলাম।” (২৪:৫১)
  • যারা আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও অসহার ভ্রমণরতদের প্রাপ্য দান করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। (৩০:৩৮)
  • নিয়মিত, সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে আস-সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দান করে। (৩১:৫)
  • এমন লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধী, ইসলামবিদ্বেষী—এমনকি এ ধরনের লোক যদি তাদের নিকটাত্মীয়, বাবা কিংবা সন্তানও হয় তবুও। (৫৮:২২)
  • অন্যের কি আছে, অন্যে কী পেল এগুলোর প্রতি যাদের মোহ নেই। (৫৯:৯)
সর্বোপরি যারা জান্নাত অর্জন করতে পারবে, সফলতার শাব্দিক ও প্রকৃত—উভয় অর্থে এরাই চূড়ান্ত সফলতা অর্জনকারী। এই সফলতা অর্জন খুবই সোজা। দুনিয়াবি অন্যান্য সফলতা অর্জনের জন্য এখানে এত শ্রম, এত কষ্ট, এত ত্যাগ করার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন শুধু আন্তরিক বিশ্বাস, নিষ্ঠা এবং ইচ্ছা। জান্নাতের মতো চিরস্থায়ী সফলতা অর্জনের জন্য আমরা কি পারব না এই কাজটুকু করতে? আল্লাহ চান তো অবশ্যই আমরা সফল হবো। আমাদের অভিভাবক হিসেবে তিনিই যথেষ্ট।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *