ফলপ্রসূ (প্রোডাকটিভ) দিন কাটানোর কিছু সহজ উপায়

owl

অফিসে বসে কোডিঙের কাজ করছিল রাজন। বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। হঠাৎ করে টেবিলের উপর রাখা স্মার্টফোনের পর্দাটা জ্বলে উঠল। ক্ষণিকের জন্য নজর সরে গেল ওদিকে। স্মার্টফোন যদিও সাইলেন্ট করা ছিল, কিন্তু তারপরও আলো জ্বলে ওঠায় বাধ্য হয়ে নজর সরে গেল।

আপাত দৃষ্টিতে এমন মনোযোগব্যাঘাতকারী জিনিসগুলো মামুলি মনে হলেও, যারা জ্ঞানসংক্রান্ত (কগনিটিভ) কাজ করেন, তাদের জন্য এগুলো যন্ত্রণাদায়ক। ফোকাসেও সমস্যা করে এগুলো।

সামান্য সময়ের জন্যও আমরা যদি কোনো কাজ থেকে ফোকাস সরাই, তাহলেও সেকাজে ব্যাঘাত ঘটে। মনোযোগ কিছুটা সময়ের জন্য হলেও সরে যায়। একবার কাজ শুরু করে যে-গতি এসেছিল, সেটা আবার ফিরে পেতে কিছুটা সময় খরচ করতে হয়।

এ ধরনের মনোযোগব্যাঘাতকারী বিষয়গুলোকে বলে অ্যাটেনশন রেসিডিউ। এর ফলে যে-মুহূর্ত থেকে মনোযোগ সরে যায়, সেই মুহূর্তের পরে আবার যখন মূল কাজে ফিরে আসা হয়, ততক্ষণে কিছুটা সময় নষ্ট হয়। কাজের মান পড়ে যায়।

সাধারণত যেসব বিষয় আমাদের কগনিটিভ কাজে হানা দেয়:

  • ফেসবুক
  • ইমেইল
  • স্মার্টফোনে ক্ষুদে বার্তা
  • ফোনকল
  • অফিসে থাকলে সহকর্মী বা বাসায় থাকলে পরিবারের সদস্যদের আনাগোনা

ফোকাস ধরে রাখার জন্য

ফোকাসের উপর হামালর ব্যাপারটি দুধরনের। একটা বহিরাগত। আরেকটা অভ্যন্তরীণ।

বহিরাগত হামলা থেকে ফোকাস ধরে রাখার জন্য মনোব্যাঘাতকারী বিষয়গুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। বা কাজের জায়গাটিকে এসব বিষয়ের আওতামুক্ত রাখতে হবে। যেমন কাজ করার সময় ফোনটাকে দৃষ্টিসীমার দূরে রাখতে পারেন। নিতান্ত দরকার ছাড়া কম্পিউটারকে ইন্টারনেট কানেকশন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারেন। এতে করে মনের ভেতর ওয়েব ব্রাউজ করার ইচ্ছা উঁকি দিলেও নেট সার্ফ করতে পারবেন না।

আরেকটি হচ্ছে পোমোডোরো টেকনিক (প্লেস্টোরে পোমোডোরো টাইমারের অনেক অ্যাপ আছে। আমার ফেবারিট ব্রেন ফোকাস)। এটা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাইমার সেট করে একান্তে, একমনে কাজ করে যাওয়া। এটা হতে পারে ১৫ মিনিট, ২০ মিনিট বা ২৫ মিনিট। এরপর ৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে আবার একমনে কাজ করা। কেউ কেউ টানা ৫০ মিনিটও একটানা কাজ করে যেতে পারেন। ব্যক্তিভেদে এই সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে। কয়েকদিন চেষ্টা করার পর আপনি নিজেই বুঝে যাবেন টানা কতক্ষণ আপনি কাজ করতে পারবেন। তবে ২৫ মিনিটকে গড় সময়সীমা ধরে রাখতে পারেন।

এ তো গেল বহিরাগত হামলার ব্যাপার। অভ্যন্তরীণ হামলাও হয়। আর বহিরাগতর চেয়ে এটও কম ক্ষতিকর না।

মনে করে দেখুন তো এমনটা আপনার সাথে হয়েছি কিনা: খুব মনোযোগ দিয়ে হয়তো একটা কাজ করতে বসেছেন। ১০-১৫ মিনিট মন লাগিয়ে কাজও করেছেন। কিন্তু এরপর হঠাৎ করে রাজ্যের সব অলসতা যেন ঘিরে ধরল। মনে হচ্ছে, আর কাজ করতে পারবেন না। কিংবা মনটা হঠাৎ উদাস হয়ে গেল। অন্য কোনো চিন্তায় মন সরে গেল। যারা নিয়মিত সালাত পড়েন, তারা এ ব্যাপারটা সহজে ধরতে পারবেন। সালাত শুরু করার পরক্ষণ থেকেই যেন দুনিয়ার সব চিন্তা মাথায় চেপে বসে।

যখনই এধরনের সমস্যা টের পাবেন, তখন অস্থির না-হয়ে, বা হতাশ না-হয়ে আলতো করে আপনার মনোযোগকে কাজের মধ্যে নিয়ে আসুন। মন বিক্ষিপ্ত হবেই—এটা মেনে নিন। 

মানুষের মন মেশিন না। কোনো একজায়গায় বসে থাকা এর ধাতে নেই। নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একে অনেকটা বাগে আনা যেতে পারে। অনেকে সেই প্রশিক্ষণের নাম দিয়েছেন ধ্যান। তবে আধুনিক পরিভাষায় একে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বলা যায়। এটার বিভিন্ন ধরন আছে। 

যেমন, একটা ধরন হচ্ছে আপনি প্রথমে নাক দিয়ে শ্বাস টেনে নেবেন। তারপর মুখ দিয়ে সেটা ছাড়বেন। এরকম কয়েক মিনিট ধরে করবেন। আর এটা করার সময় সব মনোযোগ শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর রাখবেন। তো করতে করতে একসময় দেখবেন যে, আপনার মন নানান বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে—আপনার পক্ষ থেকে কোনো চেষ্টা ছাড়াই। যখনই বিষয়টা আঁচ করতে পারবেন, তখনই আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের এই কৌশলটা যেকোনো কাজে ফোকাস ধরে রাখার বেলাতেও সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। কাজ করতে করতে যখনই মন অন্যদিকে ছুটে যাবে, তখনই আলতো করে মনকে আপনার কাজে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। এভাবে কয়েকদিন চর্চা করলে, আল্লাহ চায় তো, আপনার মনোযোগে ব্যাপক উন্নতি ঘটে যাবে।

অভ্যন্তরীণ হামলাকে দূর করার আরেকটা উপায় হচ্ছে স্মার্ট ব্রেক।

কাজ করতে করতে যখন হাঁপিয়ে উঠবেন, কাজ ফেলে উঠে আসতে মন মন চাবে, তখন ৫-১০ মিনিটের স্মার্ট ব্রেক নিন।

এর মানে এই না যে, বিরতির সময়টাতে আপনি ফেসবুক গুতোবেন। ইমেইল চেক করবেন। তাহলে সেটা এক প্রকার বিরতি হবে বটে। কিন্তু স্মার্ট ব্রেক হবে না।

স্মার্ট ব্রেক নেওয়ার জন্য যেটা করতে পারেন তা হচ্ছে:

  • কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকা
  • হাঁটা
  • হালকা শরীরচর্চা যেমন: পুশআপ, জাম্পিং জ্যাকস, স্কোয়াট (ইউটিউবে খুঁজে এগুলো দেখে নিতে পারেন)
  • পানি খাওয়া
  • চা বা কফি খাওয়া। তবে চিনিযুক্ত খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।

ব্যস। এগুলোই।

জানা একজিনিস। আর কাজে প্রয়োগ করা আরেক জিনিস। আমরা অনেক কিছুই জানি। কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ করি না। জানা জিনিস যেটা প্রয়োগ করা হয় না, সেটা পণ্ডজ্ঞান।

কাজেই, এক্ষুনি অ্যাকশন নিন। কাগজ-কলম নিয়ে লিখে ফেলুন উপরে যেসব পরামর্শ দেওয়া হলো সেগুলো থেকে কোনগুলো আপনি এই মুহূর্ত থেকে প্রয়োগ করবেন।

মন্তব্যের ঘরেও লিখে জানান। সেক্ষেত্রে এটা হবে জন-জবাবদিহিতার মতো।

সবার দিনগুলো ফলপ্রসূ কাটুক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *