দুদিন আগে ঘুরে এলাম শ্রীমঙ্গল জেলার ‹হাম হাম› থেকে। মূল জায়গাটা নয়নাভিরাম বলতে যা বোঝায় তা হয়তো নয়, তবে মানুষের তেমন পদচারণা নেই বলে অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মতো জায়গাটা এখনো নোংরা হয়ে যায়নি।
গাড়ি যে পর্যন্ত যায়, তার পর থেকে ‹হাম হাম› যাওয়ার দুটো পথ আছে। একটা হচ্ছে পাহাড়ের উপর দিয়ে দুঘন্টার পথ। সাধারণ পর্যটকরা এ পথটাতেই বেশি যায়। আরেকটি পথে রয়েছে খাল, পুকুর, পাহাড়, পাথর, গিরিপথ—একটা ঘন জঙ্গলে যত রকমের প্রতিবন্ধকতা থাকা দড়কার তার সব উপকরণে পরিপূর্ণ। অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়ার জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম দ্বিতীয় পথটাই।
এই শঙ্কুল পথে চলতে গাইড না নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। গাইড সাধারণত তারাই হয় যারা আগে থেকে পথটা চেনে, পথের আপদগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানে।
একজন আদর্শ গাইডের মতোই আমাদের গাইড প্রতিটা খাল, প্রতিটা পুকুর, প্রতিটা গিরিপথ পার হওয়ার সময় সতর্ক করে দিচ্ছিলেন, দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কীভাবে পথ চলতে হবে। কীভাবে পিছলা পাথরগুলো সাবধানে পার হয়ে আসতে হবে।
আমরা ১১জন অভিযাত্রী সুবোধ বালকের মতো গাইডকে অনুসরণ করছিলাম। সব প্রশংসা আল্লাহর, কোনো বড় ধরনের বিপত্তি ছাড়াই আমরা নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছোতে পেরেছিলাম সহজেই।
ফিরতি পথে আসার সময় দেখলাম কিছু লোক এসেছে গাইড ছাড়া। যেহেতু তাদের সঙ্গে গাইড নেই, তাই তারা জানে না কোন পথটা সহজ, কোন পথে গেলে কষ্ট কম হবে, বিপদ কম হবে। ফলাফল: এমন এক পাথুরে পথের উপর গিয়ে তারা আটকে গেল, যেখান থেকে তারা নামতেও পারছে না—কারণ, নিচে গভীর পানি—এগোতেও পারছে না, কারণ সামনে যাওয়ার আর উপায় নেই। তাদের সামনে সমাধান ছিল দুটি:
- পেছনে ফিরে যেয়ে কোনো গাইডের বা যে-জানে এমন কারও সাহায্য নিয়ে সহজ পথে ফিরে আসা।
- গভীর পানিতে অনিশ্চিত যাত্রা।
আমাদের জীবনের অভিযাত্রাটাও তো এমনই। কেউ স্রষ্টার দেওয়া গাইডকে অনুসরণ করছে, কেউ করছে না। যারা করছে তারা সুন্দরভাবে সহজভাবে, তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এগিয়ে যাচ্ছে চূড়ান্ত গন্তব্যে।
আর যারা অনুসরণ করছে না, তারা সেই গাইডবিহীন লোকগুলোর মতো আটকে আছে। এদের কেউ হয়তো অনুশোচনা করে সরল-সহজ-সঠিক পথে ফিরে আসছে। কেউ-বা হারিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত অতলে।
স্রষ্টা দয়াগুণে জান্নাতে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যুগে যুগে পাঠিয়ে গেছেন একের পর এক বার্তাবাহক, দূত, গাইড। সেই সব নাবি-রাসূলদের মধ্যে সর্বশেষ গাইড হলেন মুহ়াম্মাদ (আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর উপর)।
যারা তাঁকে অনুসরণ করবেন তারা নিজেদের কল্যাণেই, নিজেদের ভালোর জন্যই করবেন। আর যারা করবেন না তাঁরা নিজেদের অমঙ্গল, নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই ডেকে আনছেন। সময় থাকতে ভেবে দেখুন আপনি কোনটা চান। গাইডকে অনুসরণ করে সব বাধা-বিপত্তি, পরীক্ষা-চ্যালেন্জ পার করে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাবেন? নাকি নিজের খেয়াল-খুশির দাস হয়ে ক্ষণিক ভালো লাগার আনন্দে মত্ত হয়ে হারিয়ে যাবেন জাহান্নামের অতলে…