বিদায় আবদুল্লাহ

সিরা বা নবিজির জীবনী পড়েছি কিছু। কিন্তু তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর এতটা বেদনাদায়কভাবে আর কাউকে বলতে দেখিনি।

অনুবাদগল্পনবিজীবন

মাসুদ শরীফ

11/18/20251 min read

নবিজির বাবার মৃত্যু, আবদুল্লাহর মৃত্যু
নবিজির বাবার মৃত্যু, আবদুল্লাহর মৃত্যু

এক মাস পার হলো। আমিনা আবদুল্লাহর জন্য অপেক্ষা করছেন। দুয়ারে বসে পথ চেয়ে থাকেন—কবে ফিরবে স্বামী।

একদিন আকাশে নতুন চাঁদ উঠেছে। আমিনা টের পেলেন তিনি গর্ভবতী। মনে তার খুশির পুলক।

অপেক্ষার দেরি যে আর সয় না। কবে আসবে আবদুল্লাহ। কবে তাকে জানাবেন এই খোশখবর।

অবশেষে এল সেই দিন। কাফেলা ফিরেছে সিরিয়া থেকে।

মক্কার ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আনন্দ। সবাই দুয়ার খুলে বরণ করে নিচ্ছেন ঘর ফেরা মুসাফিরদের।

চোখমুখে সবার সে কী ক্লান্তি। তবু মুখে হাসি। পশুগুলোর পিঠ বোঝাই মালপত্র, পয়সাকড়ি, উপহার আর দামি দামি সব জিনিস।

আমিনাও কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার আড়ালে। সামান্য আওয়াজেই বুক ধক করে ওঠে। এই বুঝি এলেন আবদুল্লাহ।

কিন্তু কই—এতক্ষণ হয়ে গেল—এখনো তো কেউ আসে না। মনে বড় দুশ্চিন্তা।

কাফেলার শেষ উট শেষ খচ্চরের পিঠ থেকে মাল নামানো শেষ। এদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে পানি খাওয়াতে। কিন্তু আবদুল্লাহ কোথায়?

হায় হায়! আবদুল্লাহর কী হলো? কোথায় তিনি?

আমিনা তার দাসী বারাকাকে পাঠাতে যাচ্ছিলেন খোঁজ নেয়ার জন্য। এমন সময় চাচা উহাইব আর শ্বশুর আবদুল-মুত্তালিব এলেন বাড়িতে। দুজনের মুখটা কেমন শুকনো।

কাফেলার লোকজন জানিয়েছে, আসার পথে আবদুল্লাহ অসুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি ইয়াসরিবে আছেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

আমিনার বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছেন না।

আবদুল-মুত্তালিব জানালেন, ভোর হতেই হারিস রওনা হবে ইয়াসরিবে। আবদুল্লাহকে নিয়ে আসবে।

পরদিন ভোরে উটকে উড়িয়ে ছুটলেন হারিস।

কিন্তু মৃত্যু যে তারচেও অনেক দ্রুত আসে।

আবদুল্লাহ আর বেঁচে নেই। হারিস পৌঁছাতে পৌঁছাতে দাফন হয়ে গেছে তার।

আত্মীয়দের বাড়িতে কদিন থেকে বিদায় নিলেন হারিস।

ফেরার পথ যেন আরও লম্বা হয়ে গেছে ভাইয়ের শোকে। এত বড় দুঃসংবাদ বইবার শক্তি যে তার নেই।

আবদুল-মুত্তালিব দেখলেন ছেলে হারিস ফিরেছে একা। মুখটা শুকিয়ে চিমসে গেছে।

আকাশটা যেন ভেঙে পড়ল তার মাথায়। ধপ করে বসে পড়লেন তিনি। চোখ দিয়ে গলগল করে ঝরল পানি। সবচে আপন যে ছেলে, সেই ছেলে আর নেই।

আমিনাকে কে দেবে এই খবর? কার আছে এত মানসিক শক্তি?

হারিস ফিরেছেন এটা আমিনা জানতেন। বারাকাকে তাই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন খবর জানার জন্য।

সাঁঝের আবছা আলোয় ছুটছে বারাকা।

হাশিমিদের বাড়িগুলোতে আজ সন্ধ্যার চেও ঘন অন্ধকার। জানালার পর্দাগুলো সব নামানো। কেউ কি মারা গেছে? তিনি কি আবদুল্লাহ?

বারাকার দৌড় থেমে গেল। তারও চোখে বানের জল। কী করে এই খবর দেবে আমিনাকে?

না, কাউকে খবর দিতে হয়নি। দরজার ওপাশে বারাকার কান্নার আওয়াজেই মাতম শুরু হয়ে গেছে আমিনার বুকে।

আবদুল্লাহ আর কখনোই ফিরবেন না।

মরুভূমির ঝড়ে কচি খেজুর গাছ যেভাবে দোলে, আমিনাও যেন দুলছেন সেভাবে। পড়ে গেলেন তিনি।

বারাকা তাকে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। স্বান্তনা দিচ্ছিল তাকে।

কিন্তু বারাকা কি সেদিন জানত, আমিনার ভাঙা হৃদয়ের দ্বার খুলে কোনো কথাই যে সেদিন আর পৌঁছাতে পারেনি?

মূল বই: ট্রেজার হান্ট

লেখক: লারিসা ইয়াশারেভিচ | জেইদ ওমেরবেগোভিচ
তর্জমা: মাসুদ শরীফ

অনুবাদ চলছে বইটির। আসবে রেডিয়েন্ট পাবলিশিং থেকে। আসামাত্র বইটির খবর পেতে নিচে সাবস্ক্রাইব করুন।