কেন জরুরি নিজের একটা ওয়েবসাইট?

ফেইসবুক-ইউটিউব হচ্ছে পরের বাড়ি। মানুষজন পরের বাড়িতে এসে পার্ফম করে। কারও কারও পার্ফরম্যান্সে ফেবু-ইটি টাকাপয়সা দেয়। কেউ ফাও খাটেন। কেউ পয়সা দিয়ে নিজের মাল প্রচার করেন।

সবই পরের জায়গায়।

প্রশাসন বা জায়গার মালিকের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ এখানে। অ্যালগরিদম বলেন বা অ্যাকসেস—সব কিছু অন্যের হাতে। নাটাই অন্যের হাতে রেখে ঘুড়ি নিজের মতো কীভাবে ওড়াবে লোকজন?

অনলাইনে নিজের জায়গা থাকা যে কত জরুরি, আমার মনে হয় অনেকেই বুঝেছেন সেটা। নিজের একটা ওয়েবসাইট হচ্ছে সেই নিজের জায়গা।

আমার কাজকারবার ইসলামি ধারার লেখালেখি-অনুবাদ আর বইপত্র নিয়ে। আমি এই বিষয়ে তাই কিছু প্রস্তাব দিচ্ছি—ভেবে দেখতে পারেন।

প্রত্যেক প্রকাশনীর নিজস্ব একটা ওয়েবসাইট থাকা দরকার। সেখানে নিজেদের বই নিজেরা বিক্রি করবেন—অন্যান্য বইয়ের সাইটের পাশাপাশি। প্রকাশনীর সাইটে মাঝে মাঝে নিজেদের বইয়ের এক্সার্প্ট (ছাপা বইয়ের অংশবিশেষ) পোস্ট করবেন আর্টিকেল হিসেবে। কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দিয়ে নিজেদের কোনো একটা বইয়ের কোনো একটা বিষয়কে ফোকাস করে নিয়মিত কন্টেন্ট লেখাবেন। বিষয়ভিত্তিক যেকোনো লেখাও থাকতে পারে—সাধারণ মানুষজনদের জানানোর জন্য, সচেতন করার জন্য, শেখানোর জন্য। সাইটের রিচ বাড়লে সাইটেই অ্যাড চালিয়ে রেভিনিউ আসবে।

কাগজের ম্যাগাজিন উঠে গেলেও ম্যাগাজিনের মতো লেখা পড়ার পাঠক কমেনি। এজন্য ম্যাগাজিন ধরনের সাইট দরকার—একটা না; কয়েকটা। এসব সাইট হতে হবে বিষয়-ভিত্তিক। যেমন কোনো কোনোটা হলো লেখালেখি নিয়ে। কোনো কোনোটা হলো অনুবাদ নিয়ে। কোনো কোনোটা হলো ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে—হানাফি ফিক্‌হ, কিংবা আত্মশুদ্ধি, বিজ্ঞান, সমাজ বা ইতিহাস ইত্যাদি।

ম্যাগাজিন ধরনের সাইটগুলো বয়স-ভিত্তিক হতে পারে। এখানে গল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস থাকতে পারে। নারীদের জন্য আলাদা থাকতে পারে। ভ্রমণ বিষয়ে হতে পারে। রান্না বিষয়ে আলাদা হতে পারে। অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনোদন—কত কিছুই তো আছে। হালাল যেকোনো বিষয়েই তো ইসলামি টাচ দিয়ে লেখা যায়, তাই না আর ওয়েব সাইটে তো ভিডিয়ো বা অডিয়ো-ও আপলোড করা যায়।

মোট কথা, নিজের জায়গা করে সেটার প্রমোশন আমি অন্যের জায়গায় চালাব; সব তল্পি-তল্পা নিয়ে আমি অন্যের জমিতে হাল চাষ করব না।

প্রকাশনীর মালিকেরা উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের সাইটের পাশাপাশি ম্যাগাজিন-ধর্মী সাইট করতে পারেন। বা কয়েকজন মিলে উদ্যোগ নিয়ে তহ্‌বিল জোগাড় করে কাজটা করতে পারেন।

প্রাথমিকভাবে একটা ওয়েবসাইটের জন্য খুব বেশি টাকার দরকার হয় না এখন; লাগবে ভালো মানসম্পন্ন লেখা—ফেইসবুকের লেখার মতো হালকা-আনাড়ি লেখা না।

বিভিন্ন ফাউন্ডেশন প্রচুর টাকা অনুদান পায়। তারা এসব টাকার একটা অংশ অনলাইনের এরকম সাইট বানাতে খরচ করতে পারেন। বা যারা কাজ করছেন তাদের দান করতে পারেন।

আমার অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে টাকা আর কন্টেন্টের চে বড় সমস্যা আনাড়ি প্ল্যানিং এবং লেগে না-থাকা। দুর্বল প্ল্যানিং, শুরুর আগেই খরচের হাত বাড়ানো, শুরুতেই ছক্কা মারার চিন্তা—এসব কারণে অনেক ভালো ভালো উদ্যোগই বাচ্চা বয়সে মারা যায়।

ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়ার সময় অনেক বাড়িওয়াল বলেন, নিজের বাড়ি মনে করে থাকবেন। থাকতে থাকতে আচানক একদিন বাড়িওয়ালা নোটিশ দেন, দুই মাসের মধ্যে বাসা ছেড়ে দিতে হবে। এক নোটিশে সব ‘পর’ হয়ে গেল।

বাসা বদলের দিনে হঠাৎ খেয়াল করলেন, আপনার পাশেই একতলা টিনশেডের এক বাড়ি আছে। দেখতে আহামরি না, কেমন যেন একটু জঙ্গলের মতো ভেতরের জায়গাটা। বাড়ির দরজায় পাথরে খোদাই করে লেখা আছে: ‘আপন নিবাস’।

আপনার নিবাস কোনটা?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *